ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত,

 

অভিনেত্রী হোক বা সাধারণ নারী সুরক্ষার দাবি নিয়ে আন্দোলন এ নেমেও সুরক্ষা মিলল না। কেন বারবার কটাক্ষের শিকার  হয় নারীরা ?ঋতুপর্ণার এই হেনস্থার ঘটনা নিয়ে কি বলছে টলিউড এর তারকারা ?

 

শহর জুড়ে চলছে R G KAR ঘটনার প্রতিবাদের ঝড়। নারীদের সুরক্ষার লড়িয়ে পথে নেমেছে সবাই। রাত দখলের লড়াই এ একটাই আওয়াজ “we want justice “ গর্জে উঠেছে শহরতলি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বড়োবড়ো তারকা রাও সেই লড়াই এ নেমেছে কিন্তু তাও কেন প্রতিবাদ এ নেমেও সাধারণ মানুষের কটাক্ষের রোষে পড়লেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ এ সত্যি সামিল হওয়া উচিত কি বলছেন তারকারা ?

গত ৪ঠা  সেপ্টেম্বর শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে সুবিচার চেয়ে প্রতিবাদী জমায়েতে সামিল হয়েছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত । সাধারণ  মানুষের মতো তিনিও প্রতিবাদে নেমেছিলেন সুবিচারের  আসায় । মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ এ নামতেই , কিন্তু পরিস্থিতি চিত্র বদলে  গেল। মিছিলের মধ্যে থেকেই অনেকেই তার  বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ (Go back ) স্লোগান দিতে শুরু করলেন, উলুধ্বনি আর শঙ্খ বাজিয়ে ব্যঙ্গ করেন । শুধু এসবে থেমে থাকেনি তার উদ্দেশে  গাড়িতে জুতোও  ছোড়া হয় । তিনি বলেছিলেন , “এভাবে করবেন না, কথা বলতে এসেছি।” কিন্তু কেউ শোনেনি। অবশেষ এ প্রতিবাদ এ সহযোগিতায় সামিল হতে না পেরে কটাক্ষের শিকার হয়ে ফিরেছিলেন তিনি। 

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরব হয়েছেন অনেক টলিউড তারকারাই। প্রশ্ন তুলেছেন তবে কি তারকাদের এই নাগরিক প্রতিবাদ এ সামিল হওয়া উচিত নয় ?এই ঘটনার সমালোচনা করে  অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় বলেন  “নারীর জন্য বিচার চেয়ে নারীকেই অসম্মান একজন বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পী সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিবাদে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর অসম্মান করলে সেই প্রতিবাদই অর্থহীন হয়ে যায়।” তার মতে , অভিনেতারা দর্শকদের বিনোদন দেন, এবং এই অপমান সেই সম্পর্কের সম্মান ক্ষুণ্ণ করেছে। তিনি বলেন, “প্রত্যেকের আত্মসম্মান রয়েছে, একজন মহিলা হিসেবে আমিও  মর্মাহত হয়েছি এই ঘটনায় “।

 ঋতুপর্ণা উপর হওয়া হামলার সমালোচনা করে উষসী  লেখেন, ‘‘ঋতুপর্ণার সঙ্গে কাল যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা সমর্থন করতে পারছি না। যে আন্দোলনের কেন্দ্রে নারী সুরক্ষা ও সম্মানের বিষয়টি রয়েছে, সেই আন্দোলনেই একজন মহিলার প্রতি এমন আচরণ একেবারেই ঠিক নয় ।

’’তিনি বলেন এটি মানুষের আন্দোলন এখানে মানুষ হাসবেন, কাঁদবেন, স্লোগান দেবেন, গান গাইবেন, চুপ করে বসে থাকবেন, ইচ্ছে হলে স্লোগানের সাথে নাচবেন, তাতে কার কী?’’

আরও পড়ুন :  লাগাতার প্রাণনাশ

নারীর অসম্মানকে প্রশ্রয় দিলে আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে আসা হয়, বললেন চূর্ণী। তিনি মনে করেন, কেউ যদি পরে নিজের ভুল বুঝে যোগ দিতে চায়, তাকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদকে স্বতঃস্ফূর্ত বলে উল্লেখ করে চূর্ণী বলেন, “প্রত্যেকের প্রতিবাদের অধিকার আছে, দেরি হলেও সুযোগ কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।” তারকাদের প্রতিবাদ করা উচিত নয়—এমনটা মনে করেন না তিনি। বরং তারকা নাগরিক সমাজের অংশ বলেই তিনি মনে করিয়ে দেন, শাসকদল বা পুলিশের মতো তারকারাদের ও প্রতিবাদের  নামার অধিকার আছে , যদিও সহজ নিশানা হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে তা বলে তারা ভয় পেয়ে প্রতিবাদ এ নামেন না এমন নয়। 

আরজি কর-কাণ্ডের আন্দোলনের শুরু থেকেই অংশ নেন ঋদ্ধি সেন, যিনি নিজেকে তারকা বলে আলাদা করতে চাননি । তাঁর মতে, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে আগে-পরে যোগ দেওয়ার  চেয়ে সবাইকে সামিল করার  আহ্বান জানানোই গুরুত্বপূর্ণ। বুধবারের ঘটনায় তিনি দেখেন, অনেকেই শুধু ভিডিয়ো করার জন্য ব্যস্ত ছিলেন, যা প্রতিবাদের মূল উদ্দেশ্যকে নষ্ট করেছে। ঋদ্ধি মনে করেন, এর ফলে খ্যাতনামীরা ভবিষ্যতে প্রতিবাদ করতে ভয় পাবেন, যা আন্দোলনকে  দুর্বল করবে। অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তীও ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এবং শিল্পীদের প্রতি এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন।তনুশ্রীর মতে, বড় আন্দোলনেএসব  বিক্ষিপ্ত ঘটনা মূল উদ্দেশ্য নষ্ট করতে পারে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এগুলো কি মানুষের চোখ আন্দোলন থেকে সরাতে করা হচ্ছে?’’ তাঁর মতে, প্রত্যেকের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার ও প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। তবে ক্ষোভ বা ট্রোলিংয়ের কারণে ভবিষ্যতে তারকারা পথে নামতে ভয় পাবেন—এমনটা তিনি মানতে নারাজ। তনুশ্রী বলেন, ‘‘আমরা প্রয়োজনে আবার রাস্তায় নামব।’’ পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ অহিংস রাখার ওপরও গুরুত্ব দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *